Posts

হাত বান্দিবো পাও বান্দিবো | শাহ আবদুল করিম

Image
শাহ আবদুল করিমের প্রয়াণ দিবসে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ কালচারাল এক্সচেঞ্জ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের জন্য “হাত বান্দিবো পাও বান্দিবো” এই গানটি গাইবো বলে ঠিক করেছিলাম। গানটি অসংখ্যবার শোনা হলেও নিজে গাওয়া হয়নি আগে। আমার খুব পছন্দের একজন শিল্পীর কণ্ঠে এটি শুনতে শুনতে প্রায় যখন তুলেই ফেলেছি - কণ্ঠে এবং ইউকুলেলেতে, তখন গানের বর্ণনা পড়তে গিয়ে দেখি, ইউটিউবে তাদের অফিসিয়াল সাইটে স্পষ্ট করে লেখা যে, গানটির শুধু প্রথম দুই লাইন শাহ আবদুল করিমের গান থেকে অনুপ্রাণিত, বাকি সুর এবং কথা আসলে অন্য আরেকটি প্রচলিত গান! ইউটিউবে গানটির আয়োজকরা তাদের অবস্থান সৎভাবে স্পষ্ট রেখেছেন, তারা দাবি না করলেও তুমুল জনপ্রিয় “আমার হাত বান্ধিবি পা বান্ধিবি” গানটি মানুষের মুখে মুখে বা বলা ভালো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শাহ আবদুল করিমের গান হিসেবেই প্রচার পাচ্ছে। অনুষ্ঠানের জন্যে গান তৈরি করে দেয়ার ডেডলাইনের একদম শেষ পর্যায়ে গানটি নিয়ে উপরের তথ্য আবিষ্কার করে আমি মোটামুটি কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থায় চলে গেলাম। তারেক এবং আমি একমত হলাম যে, অন্তত শাহ আবদুল করিমের স্মরণে যে অনুষ্ঠান সেখানে তাঁর নিজের করা গান গাওয়াটাই যুক্তিযুক্ত হবে। পরে

নজমুল আলবাবের " পাতা ঝরার আগের গল্প" - আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া বা স্মৃতির চর্বণ

Image
আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথা নয়। গল্পের ছলে উল্টেপাল্টে আনা ফেলে আসা জীবন আর স্মৃতির এক মায়ার বাক্স "পাতা ঝরার আগের গল্প"। দেশ, মা, বাবা, মধ্যবিত্ত মফস্বলের জীবন- যেখানে কবিতা, গান বা নাটকের মত বোকা বোকা সংস্কৃতির চর্চা করা ছাপোষা মানুষেরা তাদের ছোট ছোট তীব্র সুখ, বেদনা এমনকি অপমান নিয়ে বেশ দিব্যি বেঁচে থাকে। কিছু "মফস্বলীয়" মানুষ আছে, জীবনভর ওরকমই গোঁয়ার থেকে যায়। তারা শহরতলির ক্ষুদ্র গন্ডি পেরিয়ে কোন এক উজ্জ্বল শহর বা/ এমনকি ভিনদেশে বাস করেও অনেক দূরের অথচ সবচেয়ে আপন নিজের দেশের স্মৃতি সম্বল করেই আজীবন বেঁচে থাকে। সেই সব পাঠক এক একটি গল্প পড়বেন আর একটু একটু করে কোথাও নিজেকে খুঁজে পাবেন। "পাতা ঝরার আগের গল্প" বইয়ের এই অত্যন্ত ছোট ছোট ফরম্যাটের গল্পগুলোকে "অণুগল্প" বলতে শিখেছিলাম অনেএএএক দিন আগে-  কৈশোরের কোন এক উজ্জ্বল দিনে, যেখানে "ভোরের কাগজ" বা "ভোকা" ছিলো, যেখানে "পাঠক ফোরাম"-এর জন্ম হয়েছিলো, সেখানে সঞ্জীব চৌধুরী আর গিয়াস আহমেদ "ফিচার" আর "অণুগল্প" লিখতে শিখিয়েছিলেন, কিছু &quo

ক্যাফের শহর মেলবোর্ন

সোম থেকে শুক্রঃ প্রতি দিন ভোরবেলা লম্বা ট্রেন যাত্রা করে শহরতলী থেকে পৌঁছুই মেলবোর্ন শহরে।   ট্রেন থেকে নেমে কাজে যেতে মাত্র দু/ তিন মিনিটের পথ। এই দু/ তিন মিনিটে যে রাস্তাটা পার হই তার নাম Degrave Street। রাস্তার দুই পাশ জুড়ে সারি সারি ক্যাফে। অত ভোরেই পুরোপুরি ব্যস্ত সমস্ত হয়ে ওঠে ডিগ্রেভ ক্যাফে পাড়া আর ফ্রেশলি ব্রুড কফির মৌতাতে ম ম করে পুরো এলাকাটা। দু'টো পা ফেলার পরেই আমি বুকভরে শ্বাস নেই, আসলে নিঃশ্বাসের সাথে টেনে নিতে চাই পৃথিবীর সমস্ত সুগন্ধির চাইতেও যে গন্ধ আমার বেশি প্রিয় তাকে। একেকটা কফিশপের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে   কফির মতই তাজা তাজা ছেলেমেয়েরা, তারা মিষ্টি হেসে ভোরের শুভেচ্ছা জানায়। তাদের সাথে হালকা মাথা নুইয়ে এগুতে এগুতে দেখি আরো আরো মানুষের মুখ। এই সব মানুষদের দেখে আমার কেবলই মনে হয় এদের বুঝি কোন কাজ নেই, এরা কেমন যেন, " তোমরা যা বলো তাই বলো/ আমার যায় বেলা বয়ে যায় বেলা/ কেমন বিনা কারণে " এরকম গোত্রের মানুষ। কারো মধ্যে কোন তাড়া নেই। ওরা আরাম করে বসে গ্যাছে, গোল গোল টেবিলগুলোর ধার ধরে। প্লেট ভর্তি খাবার - The famous Aussie big brekki। আছে পোচড এগস, বা স্ক্রাম্বল

ম্যাজিকাল মোমেন্ট

Image
প্রতিবার   জন্মদিনের   আগে   আমাদের   কমন   প্রশ্ন   হচ্ছে  -  “ এবারের   জন্মদিনে   কি   চাস ”?  উত্তরটা   ও   কমন   দুজনের   তরফ   থেকেই ,  " কিচ্ছু   চাই   না   আমি " ।   ব্র্যাকেটে  " আজীবন   ভালোবাসা   ছাড়া ! " এবার   যখন   এই   প্রশ্ন   এলো ,  তখন   আমি   মাসরুফ   হোসেন   এর  " আগস্ট   আবছায়া "  পড়ছি।   জানিও   না   কোন   ফাঁকে   দুম   করে   বলে   ফেললাম ,  " শেলীর   কবিতার   বই   পড়তে   চাই। " একটা   কিছু   উত্তর   পেয়ে   সে   বেশ   নড়েচড়ে   বসলো ,  "আর"?  " শেলী   যদি   পড়ি   তাহলে   কিটসও   পড়তে   চাই ,  বাবার   মুখে   দুই   জনের   কথাই   শুনেছি। " " চমৎকার।   আর ?" আমাকে   তখন   ভুতে   পেয়েছে   কিনা   জানিনা ,  আমি   বলে   যাচ্ছি  - " রবার্ট   ফ্রস্টের   কবিতা   এখানে   ওখানে   পড়েছি ,  খুবই   ভালো   লাগে   কিন্তু   আমার   বই   নাই " ।   " আচ্ছা !"  এবার   সে   মিটি   মিটি   হাসছে।  " আমার   কলিগ   তার   দেশে  ( পশ্চিম   বঙ্গ )  যাচ্ছে।   দুট

সকাল, বাবা আর রবিগুরুর গান

আজকের সকালটা মনোরম। কয়েকদিনের গরমের পরে বৃষ্টি, ঠান্ডা ঠান্ডা। তারপর এলো আলোঝরা রোদ। ট্রেনে জানালার পাশে বসে মনীন্দ্র গুপ্তর ভাষাতীত অসাধারণ লেখনীতে ”অক্ষয় মালবেরি” পড়তে পড়তে নিজের ছেলেবেলার টুকরো কিছু দৃশ্য মনের গহীন থেকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে যাচ্ছে। ট্রেন থেকে নামার পথে সাহানার গলায় নতুন এই গানটা শুনে সকাল আর ট্রেনযাত্রার ষোলকলা পূর্ণ হলো। কারণ দৃশ্যপটে এবার চলে এসেছে বাবা। আমার ছোটবেলার দাপুটে বাবা নয়, সঙ্গিহীন একলা বাবা। যে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে মৃদু আওয়াজে রবীন্দ্রসংগীত শুনছে। একটু পরেই তার হাতে উঠবে খবরের কাগজ আর চা। আমি ঘরে ঢুকতেই বাবা তার স্নিগ্ধ হাসি মুখে মেখে রোজকার মত বললেন, “সকালবেলা রবীন্দ্রসংগীত শোনার সাথে কোন কিছুর তুলনা নেই, বুঝলি মা?  “  কি গা’বো আমি, কি শুনাবো “

কবিতা, আমার

কবেকার সেই ঘাস হয়ে যাওয়া হৃদয়ে কুয়াশামগ্ন অথই জলের মতন যে ভালোবাসা, সেইখানে অকস্মাৎ ভেসে ওঠে অপূর্ব শালুক, বুনোহাঁস- কবিতা মানেই আমার কাছে জীবনানন্দ দাশ! 

উপলব্ধি

কবেকার পুরনো সে বোধ ক্ষণে ক্ষণে, নিরবে নিভৃতে, নিঃশব্দ চিৎকারে- আজো জেগে থাকে মনের গহীনে। অনেক কাল কেটে গেছে তার নাম শুধায়ে। উত্তর আসে নি কোন। এখন আর উত্তরের কোন প্রত্যাশা নেই। আসলে, কোন কিছুরই কোন প্রত্যাশা নেই। যে জীবন চলে বাতাসের মত মৃদু-মন্দ অথবা দমকা ঝড়ো হাওয়ায়, তার কাছে, তাকে থামিয়ে, কিছু জানতে চাওয়ারও কোন মানে নেই। যে বোধ কখনও ছড়ালো না ডানা, কইলো না কোন কথা এত আকুলতায়, কেবল বছরের পর বছর একই একগুয়েমিতে বড্ড গোঁয়ারের মত ঘাপটি মেরে বসে রইলো সমস্ত চেতনা জুড়ে। জানিয়ে দিলো, “আমি সত্যি, মিথ্যা তোমার নিত্য দিনের আনন্দ চেষ্টা”- আজ দশটি বছর পরে, আমি নিজেই তার নাম দিলাম, শূণ্যতা।